মাটি পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

মাটি পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

মাটি পরিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য:

1️⃣সয়েল টেস্ট কাকে বলে?
2️⃣ সয়েল টেস্ট কত প্রকার কী  কী?
3️⃣আদর্শ পেনিট্রেশন পরীক্ষা পদ্ধতি।
4️⃣কেন সয়েল টেস্ট করবেন? 
5️⃣সয়েল টেস্ট করার সময় কী কী বিষয়ে সতর্ক থাকবেন।
6️⃣ N-Value অনুসারে ভারবহন ক্ষমতা কত?
7️⃣কত কাঠা জমিতে কতটি বোর হোল করতে হবে?

1️⃣নং এর উত্তরঃ - সয়েল টেস্ট’ কথাটির অর্থ হলো মাটি পরীক্ষা করা। সয়েল টেস্ট বলতে বিয়ারিং ক্যাপাসিটি’ বা মাটির ‘ভারবহন ক্ষমতা’ বুঝায়। ফাউন্ডেশন গভীর না অগভীর হবে তা নির্ভর করে সয়েল টেস্ট রিপোর্টের উপর।যে কোন ধরনের স্থাপনা যেমন আবাসিক ভবন, বাণিজ্যিক ভবন,স্কুল-কলেজ,মসজিদ, মন্দির, হাসপাতাল, শপিং কমপ্লেক্স, মার্কেট, কারখানা, গার্মেন্টস, গুদাম ঘর, ব্রিজ-কালভার্ট, সড়ক-মহাসড়ক, রেললাইন, এয়ারপোর্ট, পাওয়ার প্লান্ট ইত্যাদির জন্য সয়েল টেস্ট করা অপরিহার্য।ভবন ধসে পড়ার যতগুলো মৌলিক কারণ আছে তার মধ্যে সঠিকভাবে মাটি পরীক্ষা না করা অন্যতম।তাই স্হাপনার নিরাপত্তার জন্য সয়েল টেস্টের রিপোর্টের ভিত্তিতেই স্ট্রাকচারাল ডিজাইন করা উচিত।

2️⃣ নং এর উওরঃ সয়েল টেস্ট প্রধানত দুই প্রকার যথা :-

(১)ফিল্ড টেস্ট
(২)ল্যাব টেস্ট

(১)ফিল্ড টেস্ট সমূহ হলো:-
ক।প্লেট লোড বিয়ারিং টেস্ট :-ইহা সাধারণত যন্ত্র পরিচালিত পদ্ধতি যা দ্বারা মাটির যে কোন স্তরে চূড়ান্ত  বিয়ারিং ক্যাপাসিটি এবং মাটির সংকোচন মাপা যায়। এই টেস্টের ফলাফল দ্বারা বিয়ারিং ক্যাপাসিটির সত্যতা যাচাই করা যায়।

খ।আদর্শ পেনিট্রেশন পরীক্ষা (Standard Penetration Test):-গতিশীল অথবা স্থির লোড প্রয়োগের মাধ্যমে মাটির পেনিট্রেশন প্রতিবন্ধকতা পরিমাপ করতে যে পরীক্ষা করা হয় তাকে Penetration Test বলে। সাধারণত বালি মাটির
ভারবহন ক্ষমতা নির্ণয়ের জন্যই এই পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।

(২)ল্যাব টেস্ট সমূহ :
ক।ময়েশ্চার কনটেন্ট টেস্ট
খ। প্লাস্টিসিটি টেস্ট
গ। আপেক্ষিক গুরুত্ব টেস্ট
ঘ।ঘনত্ব টেস্ট
ঙ।কনসোলিডেশন টেস্ট
চ। ডাইরেক্ট শেয়ার টেস্ট

3️⃣নং এর উওরঃ আদর্শ পেনিট্রেশন পরীক্ষা পদ্ধতি হলো:-আমরা জানি আদর্শ পেনিট্রেশন পরীক্ষার মাধ্যমে সাধারণত বালি মাটির ভারবহন ক্ষমতা নির্ণয় করা হয়।আদর্শ পেনিট্রেশন পরীক্ষার জন্য প্রথমেই আমরা ৫৫ থেকে ১৫৫ মিলিমিটার ব্যাস বিশিষ্ট একটি গর্ত করে নিবো। পরীক্ষার জন্য পেনিট্রোমিটার নামক স্প্লিট স্পুন নমুনা সংগ্রাহক হিসেবে ব্যবহার করবো। যার ভেতরের ব্যাস ৫০ মিলিমিটার এবং বাহিরের ব্যাস ৩৫ মিলিমিটার। এবং এর দৈর্ঘ্য ৬০০ মিলিমিটারের কম নয়। ড্রিল রডের সাথে স্প্লিট স্পুন নমুনা সংগ্রাহকটি যুক্ত করে গর্তের নিচের প্রান্তে স্হাপন করবো। তারপর ৬৫ কেজি ওজনের হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে নমুনা সংগ্রাহকটিকে মাটির অভ্যন্তরে কমপক্ষে ৬০০ মিলিমিটার প্রবেশ করাবো। হাতুড়িকে ৭৫০ মিলিমিটার উপর হতে মিনিটে ৩০ বার ফেলবো। প্রথম ১৫০ মিলিমিটার প্রবেশ করাতে আঘাতের সংখ্যা হিসেব করবো না। পরবর্তী ৩০০ মিলিমিটার প্রবেশ করাতে আঘাতের সংখ্যা হিসেব করবো। এই ৩০০ মিলিমিটার প্রবেশ করাতে আঘাতের সংখ্যাকে পেনিট্রেশন রেজিস্ট্যান্স বলে।

4️⃣নং এর উওরঃ সয়েল টেস্ট করার কারণ:- নিমার্ণ কাজের ডিজাইন করার পূর্বেই সয়েল টেস্ট করতে হবে । কারণ ফাউন্ডেশন ডিজাইন এর জন্য এটি একটি অপরিহার্য পূ্র্বশর্ত। ফাউন্ডেশনের ধরণ সম্পর্কেও সয়েল টেস্ট এর মাধ্যমে ধারণা পাওয়া যায়।সয়েল টেস্ট না করলে ফাউন্ডেশন ডিজাইন অসম্ভব। সঠিক ফাউন্ডেশন ডিজাইন না থাকলে স্থাপনা সেটেল করা বা দেবে যাবার সম্ভাবনা থাকে যা পরবর্তীতে ক্র্যাক বা ফাটল সৃষ্টি করে স্থাপনার জন্য ক্ষতি বা হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আবার যে সব এলাকায় মাটি দূর্বল সেখানে সঠিকভাবে পাইলিং ডিজাইন করার জন্য সয়েল টেস্ট প্রয়োজন। ভূমিকম্পের প্রভাব প্রতিরোধে সঠিকভাবে পাইলিং করতে হয়। তাই সয়েল টেস্ট অপরিহার্য।

5️⃣নং এর উওরঃ সয়েল টেস্ট করার সময় যে বিষয় গুলো সতর্ক থাকবেন:-
১। হ্যামারের ওজন ৬৩.৫ কেজি কিনা নিশ্চিত করতে হবে
২। ড্রপিং ৭৫০ মিলিমিটার উচ্চতা থেকে হচ্ছে কিনা। 
৩। আলাদা আলাদ প্যাকেট নমুনা মাটি সংরক্ষণ করছে কিনা।
৪।N Value সঠিকভাবে কাউন্ট এবং লিপিবদ্ধ করছে কিনা।
৫। ড্রিলিং রডের উপর ১৫০ মিলিমিটার পর পর দাগ দেয়া হয়েছে কিনা।
৬।এডাপটরের বাল্বটা ঠিক মতো কাজ করছে কিনা ।

6️⃣নং এর উওরঃ N - Value এর মান অনুসারে ভারবহন ক্ষমতা :-
১।N-Value এর মান ২ বা এর কমলে বুঝতে হবে মাটি খুবই নরম। যার ভারবহন ক্ষমতা প্রতি বর্গমিটারে ২ টন। 
২। N-Value এর মান ২ - ৫ হলে বুঝতে হবে নরম মাটি। যার ভারবহন ক্ষমতা প্রতি বর্গমিটারে ২ - ৫ টন।
৩ ।N-Value এর মান ৫-৯ হলে বুঝতে হবে মধ্যমানের মাটি। যার ভারবহন ক্ষমতা প্রতি বর্গমিটারে ৫-১০ টন।
৪।N-Value এর মান ৯-১৭  হলে বুঝতে হবে শক্ত মাটি। যার ভারবহন ক্ষমতা প্রতি বর্গমিটারে ১০-২০ টন।
৫।N-Value এর মান ১৭-৩৩ হলে বুঝতে হবে মাটি খুবই শক্ত। যার ভারবহন ক্ষমতা প্রতি বর্গমিটারে ২০-৪০ টন।
৬।N-Value এর মান ৩৩ এর উপরে হলে বুঝতে হবে মাটি খুবই কঠিন। যার ভারবহন ক্ষমতা প্রতি বর্গমিটারে ৪০ টনের উপরে।

7️⃣নং এর উওরঃ কত কাঠা জমিতে কতটি বোর হোল করতে হবে :-
১।তিন কাঠা জমির জন্য ৩ টি বোর হোল।
২। ৩-৫ কাঠা জমির জন্য ৫ বোর হোল।
৩।৫-১০ কাঠা জমির জন্য ৮ টি বোর হোল করতে হবে।